৪র্থ শ্রেণী থেকে আমার লেখালেখির শুরু। জন্মস্থান রাজশাহীর শিশু একাডেমী থেকে আমার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে। ৫ম শ্রেণীতে পড়াকালীন প্রথম প্রকাশিত হয় আমার লেখা একটি কবিতা। নাম ‘শেয়াল মামা’। কোন পত্রিকায় তা আর স্মরণে নেই। আর পত্রিকাটি সংরক্ষণেও রাখা হয়নি। ছোট খাটো অখ্যাত লিটিল ম্যাগাজিনগুলো দিয়ে আমার লেখার হাতে খড়ি।
আমার জন্ম এমন একটি পরিবেশে যেখানে গান শেখার হারমোনিয়াম বাসার বড়দের ভয়ে বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখতে হতো। এমন একটি পরিবারের মেয়ে হয়ে আমার আজকের এই পথচলার জন্য অন্যতম অবদান আমার মায়ের। যে মানুষটির অক্লান্ত শ্রম আর বিসর্জনের জন্য আমি আজ বাংলাদেশের উৎকৃষ্ট মানের কর্পোরেট হাসপাতালের চিকিৎসক। চিকিৎসা জগতে আমি সবে মাত্র ‘হাটি হাটি পা পা,’ ডিগ্রীর জন্য করছি নিরলস পরিশ্রম। ৪র্থ শ্রেণী থেকে লিখতে লিখতে আজ আমার লেখা ছাপা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদপত্রগুলোর পাশাপাশি বিদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। আমি প্রায় অর্ধশতাধিক সংবাদপত্রের (প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্র, লিটন ম্যাগাজিন) সাথে জড়িত। আমি বিশ্বের ২৭টি দেশের সংবাদপত্রের সাথে সম্পৃক্ত। ছোট্টবেলা থেকেই আমি খুব কাজ পাগল মানুষ। স্কুল বয়স থেকেই ছোট্ট নোট বুকে নিয়মিত লিখতাম পুরো মাসের কাজ। অকারণ আড্ডাবাজি, ফাঁকিবাজি, অলসতা আমার ভালো লাগে না। আমার আব্বু ছিল ভীষণ পরিশ্রমী আর কাজ পাগল মানুষ। মানুষটি তার কাজ নিয়ে এতোই ব্যস্ত থাকতো যে, আমাদেরকে ঠিকভাবে সময় দিতে পারতোনা। মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম আর অনিয়মের জন্য ১৯৯৭ সাথে মাত্র ৪৩ বছরে না ফেরার দেশে চলে যায় আমার জন্মদাতা। ভালোবাসা আর মমতার আচলে আজ অবধি নিত্য বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে আমার মা। যে মানুষটির স্বপ্ন আমাদেরকে নিয়ে গগনচুম্বী। শিশু বয়স থেকেই আমি নাম লেখাতাম মেধা তালিকায়। সেই সাথে আমার আম্মার প্রচন্ড ইচ্ছা আর অক্লান্ত সহযোগিতায় আমি হয়েছিলাম রাজশাহী শিশু একাডেমী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, দৈনিক প্রথম আলো বন্ধু সভা সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আর সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁকা আর উপস্থপনাতে আমি ছিলাম ভীষণ তৎপর। খ্যাতি আর পুরষ্কারও আছে আমার ঝুলিতে। তবে বড় কোন পুরষ্কার এখনো পাইনি। স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে আসতো আমাদের সংগঠনের ছবি। আর সেই সাথে নিয়মিত ছাপা হতো আমার বিভিন্ন রকম লেখা। গল্প, ফিচার, কবিতা। আর আমার কলম আজ অবধি চলছে। আর চালিয়ে যেতে চাই কবরের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। রাজশাহীর সেরা স্কুল, কলেজের সেরা ব্যাচের ছাত্রী আমি। কিন্তু ভীষণ দুর্ভাগ্য। আব্বুর মৃত্যু আর ডেঙ্গু জ্বরের জন্য আমার স্থান হলোনা ঢাকা মেডিকেল কলেজে। আমার স্বপ্নের আসমান হতে মাটিতে পড়ে গেলাম আমি। প্রিয় রাজশাহীকে গুড বাই জানিয়ে ভর্তি হলাম নগরীর শিকদার মেডিকেল কলেজে। রাজশাহীর সংস্কৃতিক অঙ্গন ছেড়ে হোস্টেল জীবনে বন্দী। আমার সংস্কৃতি প্রাণ মনটা ছটফট করতো। জড়িয়ে পড়লাম দৈনিক প্রথম আলো বন্ধুসভায়। আর সেই সাথে প্রবেশ করলাম সাংবাদিকতায়। ২০০৫ থেকে নেশার মতো লিখতে শুরু করলাম দৈনিক প্রথম আলোতে। অর্জন করলাম দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিকতার (প্রদায়ক/কন্ট্রিবিউটর) কার্ড। দীর্ঘ বছর যাবৎ নিয়মিত লিখেছি। আর এখন লিখছি চিকিৎসক ও লেখক হিসাবে।
প্রিয় পাঠক, প্রাপ্তির হিসাবে আমি এখনো নগন্য। নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনাদের সবার ভালোবাসাই আমার পথ চলার শক্তি। সূদুর ইটালী থেকে আল আমিন ভাই অনুরোধ করলেন আমার নিজের অর্জন নিয়ে লেখার জন্য। প্রথমে রাজি হইলি। কারণ নিজেকে নিয়ে লেখবার মতো অর্জন আমার নেই। ভাইয়াকে সম্মান জানানোর জন্য, লজ্জার মাথা খেয়ে এতোক্ষণ নিজের ঢোল নিজেই পিটালাম।
শ্রদ্ধেয় পাঠক, চিকিৎসা আর লেখার জগতে আমি “হাটি হাটি পা পা” জাতির পতাকা হাতে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আপনাদের দোয়া আর শুভকামনা আমার সর্বোচ্চ শক্তি। সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, আমার জাতির সম্মান।
সৃষ্টিকর্তার দারবারে আমার মিনতি
“বিধাতা তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শক্তি…!!!”
ডাঃ ফারহানা মোবিন